কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুর বাগানে – একটি লোকগীতির দীর্ঘ যাত্রা

 কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুর বাগানে – একটি লোকগীতির দীর্ঘ যাত্রা


কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুর বাগানে – একটি লোকগীতির দীর্ঘ যাত্রা


বাংলা লোকসংগীতের বিশাল ভাণ্ডারে কিছু কিছু গান আছে, যেগুলো সময় পেরিয়ে এসে আজও মানুষের হৃদয়ে সমানভাবে দোলা দেয়। তেমনই এক গান হলো – "কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুর বাগানে"। প্রেম, প্রতীক ও প্রতিচ্ছবির এক অসামান্য মেলবন্ধন ঘটেছে এই গানের কথায় ও সুরে, যা শোনামাত্রই শোনার মধ্যে এক ধরণের চিরন্তন আকর্ষণ তৈরি করে।



---


🪶 মূল সৃষ্টি ও পটভূমি


এই গানটির মূল রচয়িতা হলেন বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলার এক অসাধারণ চারণ কবি – পাগলা ছত্তার। তিনি ছিলেন এমন একজন লোকশিল্পী, যিনি নিজের রচিত গান নিজেই পরিবেশন করতেন, সম্পূর্ণ মৌখিকভাবে। তার গানগুলোতে মিশে থাকত গ্রামীণ জীবনের অনুভূতি, প্রেম, প্রতিবাদ ও দর্শনের ছোঁয়া।


"কে দিল পিরিতের বেড়া" গানটি মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া এমন একটি লোকগীতি, যা এখন নানা রূপে বিবর্তিত হয়ে পৌঁছে গেছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত।



---


🎙️ বিভিন্ন শিল্পীর পরিবেশনা


বিভিন্ন সময়ে এই গানটি নতুন নতুনভাবে পরিবেশিত হয়েছে বিভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ডলি সায়ন্তনী–র জনপ্রিয় কণ্ঠে রেকর্ড হওয়া ভার্সন, যা এই গানের জনপ্রিয়তাকে আরো বিস্তৃত করে।


আরও আধুনিক ফর্মে, এই গানটি "তাণ্ডব" নামের একটি চলচ্চিত্রে প্রীতম হাসান ও জেফার–এর কণ্ঠে নতুন সুর ও অ্যারেঞ্জমেন্টে ব্যবহার করা হয়, যা তরুণ প্রজন্মের কাছে আবার নতুনভাবে জায়গা করে নেয়।



---


🎼 গানের সুর ও প্রতীকী অর্থ


গানটিতে "লিচুর বাগান", "কমলার বাগান", "বেড়া"– এসব শব্দ কেবল প্রকৃতির উপমা নয়, বরং এগুলো প্রেমের সীমাবদ্ধতা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।

"কে দিল পিরিতের বেড়া" – এই প্রশ্নের ভেতরেই রয়েছে প্রেমের পথের বাধা, সমাজের সীমা, আর একান্ত অনুভবের প্রকাশ।


এই গানটির আরেকটি বিশেষত্ব হল গানের ভাষা ও টোন, যা একদিকে আবেগপ্রবণ, অন্যদিকে সহজ ও গ্রামীণ রসে ভরপুর।



---


🧭 সংক্ষেপে তথ্য:


মূল লেখক ও গীতিকার: পাগলা ছত্তার (নেত্রকোণার চারণ কবি)


মূল সুরকার: পাগলা ছত্তার (লোকসুরে রচিত)


জনপ্রিয় পরিবেশনা: ডলি সায়ন্তনী, প্রীতম হাসান, জেফার


ধরন: আধুনিক লোকগীতি, ফোক ফিউশন




---


❤️ লোকগীতি, সময় ও উত্তরাধিকার


"কে দিল পিরিতের বেড়া" গানটি কেবল একটি রোমান্টিক গান নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। এটি প্রমাণ করে, লোকগীতি কখনো মরেনা – সময়ের সাথে রূপ বদলালেও তার প্রাণ থাকে চিরন্তন।


এটি আমাদের লোকজ ঐতিহ্যের এমন একটি অংশ, যেটি একদিকে গ্রামবাংলার গন্ধ বহন করে, আর অন্যদিকে প্রেম ও মানবিকতার সার্বজনীন বার্তা দেয়।



Comments